নারীর সৌন্দর্য ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি
কেমন হত যদি কোনো নারীর মাথায় যদি চুল না থাকে অথবা সে মাথার সকল চুল মুড়িয়ে টাক হয়ে রাস্তায় ঘোরে, পুরুষ, তুমি তাকাইতা তার দিকে? কোন পুরুষ-মানুষ তার দিকে তাকাবে?
কোন নারী যদি হয় স্তনহীনা, শূন্যবক্ষা। কেউ চেয়ে দেখবে তাকে?
সম্ভবত না। তাকাবে না। দেখবে না।
কারণ সমাজে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, চুল ও স্তন হলো নারীর সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। কিন্তু এই ধারণাগুলি কি সত্যিই নারীর পরিচয়কে নির্ধারণ করে?
কারণ চুল নারীর সৌন্দর্য। চুল ছাড়া একটা মেয়ে কখনও নারী হয়ে ওঠে না। স্তনও তো নারীর সৌন্দর্যই বহন করে থাকে। এটা নারীর নারী-বৈশিষ্ট্য বহনকারী অঙ্গ। নারীর নারীত্ব। পালশ্রিটিউড(pulchritude)।
Simone de Beauvoir তার “The Second Sex” গ্রন্থে বলেছেন, “One is not born, but rather becomes, a woman.” অর্থাৎ নারীত্ব কোনো প্রাকৃতিক বিষয় নয়; এটি সামাজিক গঠনের ফল। চুল ও স্তন নারীর দেহের অংশমাত্র, যা তাকে একটি মানুষ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে না। নারীর ব্যক্তিত্ব, মেধা এবং মনন তার আসল পরিচয় বহন করে। “The Second Sex” বইটির পিডিএফ লিংক।
কিছু আছে ওড়নাবিহীন বুক দেখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়ে থাকে।
ডবকা নারীর উঁচুবুক দেখলেই কিছু পুরুষের (কোথাও-একটা না কিছু-একটা) ছনছন করে ওঠে।
একটু মাংসল নিতম্ব দেখলেই বলে, “কী মাল যাচ্ছে রে!”
তাদের কাছে নারীস্তন মানে: ওয়াও! কচিডাব! আহ্! কী ডাশা কতবেল! উহ্! বেগুনের মত!
নিজের নিকৃষ্টতর লোলুপতা প্রকাশ করে এইভাবে। আবার কোন মেয়েকে যদি দেখে জিন্সপ্যান্ট পরা, গায়ে গেঞ্জি, কোন মহিলার স্লিভলেস ব্লাউজ পরিহিত, এই লোলুপ লোকগুলোই বলে, “মেয়েটা কি নির্লজ্জ দ্যাখছো, দেশটারে রসাতলে নামাইল অ্যাকেবারে!”

আসলে কিন্তু এদের ভালো লাগে মনে মনে। ভোগ করার ইচ্ছে জাগে এদের অন্তরে। এই দল কী করে সুযোগ বুঝে ভিড়ের মধ্যে ওইসব মহিলাদের ছুঁয়ে দেয়। দেখবেন এরা নিজেদের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে গল্পও দেয় অন্যদের সাথে নির্লজ্জের মত।
এদেরই মত বাংলাদেশে ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক দায়ী। মোটেও নয়। দায়ী আমাদের মানসিকতা। প্রত্যেকটা পুরুষই শালা এক-একটা ধর্ষক।
শুধু কি করলেই ধর্ষণ হয়, ছুঁয়েও ধর্ষণ হয়, তাকিয়েও ধর্ষণ হয়।
আমার স্কুলবান্ধবী আর্জিনা খুব রাগী উচিতবাদী মেয়ে ছিল। সে বলত, “লাল কাপড় পরা দেখলেই নিজের বউ মনে হয়, না?”
আসলেই। এরমই মনে করে একদল পোঁদঘেঁষা পুরুষ-মানুষ।
বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যে বিতর্ক হয়, তাতে অনেকেই নারীর পোশাককে দায়ী করে। কিন্তু UN Women এবং WHO-এর গবেষণা বলছে, ধর্ষণের কারণ কখনোই পোশাক নয়; এটি সম্পূর্ণ অপরাধীর মানসিকতার প্রতিফলন। নারীর প্রতি লোভনীয় দৃষ্টি কিংবা তাকে অশালীনভাবে স্পর্শ করাও ধর্ষণের শামিল।
Martha Nussbaum তার “Objectification” প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, যখন নারীদের কেবল শরীর হিসেবে দেখা হয়, তখন তা সমাজের মানবিকতার অবক্ষয়ের ইঙ্গিত দেয়।
নারী প্রকৃতি। নারীদেহ প্রকৃতিপ্রদত্ত সৌন্দর্য।
সৌন্দর্য মোটেও গোপন বস্তু নয়। সৌন্দর্যকে বিলিয়ে দেয়াই প্রকৃতির নিয়ম। সুতরাং নারী তার বক্ষে ওড়না না জড়াতেই পারে।(আমি উন্মুক্ত বক্ষের কথা বলছি না।) এটা তার ইচ্ছা। স্তন নারীর সম্পদ।
তুমি পুরুষ সে সৌন্দর্য দেখবা। উপভোগ করবা। কেন উদযোগ করে তার শরীরে গা ঘেঁষতে উদ্যত হও, হে পুরুষ?
যেভাবে তুমি সকাল দেখ, বিভোর হয়ে সূর্যের রঙ মাখো, সুগন্ধা— রাস্না মাধবীলতা মল্লিকা তুলসী স্বর্ণযূথিকার সুবাস শোকো নারীও তেমনি।
কখনো শিশিরসিক্ত-সকাল। কখনো দুর্বা। কখনো ফুল। কখনো নারী স্রোতস্বিনী খরস্রোতা। কখনো স্নিগ্ধ শীতল শান্ত সমতল।
নদীর মতন দীর্ঘ তার বর্ণনা। বহমিত তার রূপ লাবণ্য। নারী কুহক।
নারীর সৌন্দর্য ভোগ্য বস্তু নয়। এটি উপভোগ করার অর্থ হলো, নারীর ব্যক্তিত্ব এবং সৌন্দর্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। John Stuart Mill তার “The Subjection of Women” বইয়ে বলেছেন, নারীর স্বাধীনতাকে সম্মান করতে হবে। নারী ও পুরুষের সম্পর্ক হওয়া উচিত সমতার ভিত্তিতে, যেখানে উভয়ে একে অপরকে সম্মান করবে।
পুরুষ তার সৌন্দর্য উপভোগ করবা। দূর থেকে তার সুবাস শুকবা। এই সুবাস পাওয়ার জন্য কিন্তু তোমাকে গর্ভাশয়ে নাক ডুবানোর দরকার নেই।
তুমি তীরে দাঁড়িয়ে তার ঢেউয়ে অন্তরে কলকল মন্হন তুলবা (কিন্তু প্লিজ, মৈথুনেচ্ছা পোষণ করবা না)।
তুমি ফ্যাদেমিটার হও, তার গভীরতা মাপ। তুমি আবিষ্কার করো তাকে। তুমি তার অতলান্ত গহ্বরে ডুবে যাওয়ার দুঃসাহসটুকু পুষে রাখ। শুকনো ডাঙায়
হাবুডুবু খেয়ে খেয়ে আকাঙ্খা ধরে রাখ। আকাঙ্খাই প্রকৃত ভালোবাসা যোগায়।
তার বৃন্ত পাপড়ি গর্ভাশয় গর্ভমুণ্ড চেটেপুটে খাওয়ার লোলুপতা লালন করো না, প্লিজ। নারীদেহ নৈবেদ্য না, এটা বোঝার মত জ্ঞান তোমাকে অর্জন করতে হবে।
নারী পুরুষের আদর্শ।
নারীদেহ ভোক্তব্য বটে কিন্তু মোটেও ভোগ্যপণ্য নয়। ভোগ আর উপভোগ’র পার্থক্যটা আমাদের এইখানে বুঝতে হবে। যদি তোমার ভোগ করার ইচ্ছা
জাগে তবে অবশ্যই তোমার মানুষিক পরিপক্বতা আসেনি। তুমি ঠিক-মানুষ হতে পারনি। এই মানসিকতাটুকু পুরুষ-মানুষকে তৈরি করতে হবে।
নারীর দেহ নারীর আভরণ। নারীর অলংকার। নারীর অহংকার। পুরুষ তুমি নারীর স্তুতি গাও। আরাধনা
কর। নৈবেদ্য ভোগের আশায় নয়। তুমি তোমার মনের নারীকে সম্মান করতে শেখ, প্রসাদ আপনিই তোমার তালুতে অবস্থান করবে।
পুরুষকে বুঝতে হবে, নারী দেবী নয়, কিন্তু সে সম্মানের দাবিদার। তার সৌন্দর্য প্রকৃতির মতোই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। তাকে অনুভব করা যায়, কিন্তু ভোগ করা যায় না। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, “বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”
নারী যদি প্রকৃতি হয়, তবে পুরুষ তাকে সম্মান এবং ভালোবাসা দিয়ে ঘিরে রাখবে। নারীর দেহ ভোগের জন্য নয়, বরং তার স্বকীয়তা এবং সত্তাকে উপলব্ধি করার জন্য। পুরুষের মানসিকতা পরিবর্তন হলেই প্রকৃত নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
Tagore’s concept of “Divine Feminine” তার বিভিন্ন রচনায় নারীর সৌন্দর্যকে প্রকৃতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। নারীর সৌন্দর্যকে দূর থেকে উপলব্ধি ও সম্মান করার আহ্বান জানান।

নারী ভোগ নারী উপভোগ:
ভাই আপনি বললেন নারী শিশির নারী ফুল নারী নদী। আবার ভাই আপনি এগুলো উপভোগও করতে বলেছেন। শিশিরকে না ছুঁয়ে কীভাবে উপভোগ
হবে? যদি একান্তই আপনার শিশিরকে আঙুলে তুলে নিতে ইচ্ছে করে, আপনি তাহলে প্রকৃতি দেখে বিমোহিত হননি। আপনি মোহে পড়েছেন। শিশিরের
শরীরের মোহে। যদি ফুলটাকে ছিঁড়েছুঁটে ঘরে নিতে ইচ্ছে করে তাহলে আপনি ভালোবেসেছেন ফুলকে নয়, ফুলের দেহেকে, রঙকে। যদি আপনার
নদীতে ডুব মারতে ইচ্ছে করে তাহলে আপনি নদী দেখেন না, আপনি ভোগ করেন নদীর দেহকে। একবার কান পেতে শোনেন নদীর কলকল ধ্বনি
দেখবেন অন্তরে তরঙ্গিত হবে ভালোবাসা। পবিত্রতা।
নারী প্রকৃতি। প্রকৃতি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। তাকে ইন্দ্রিয় দিয়েই উপভোগ করতে হয়। নারী বস্তু নয় যে তাকে ছুঁয়েছুঁয়ে টিপেটিপে দেখতে হবে।
তবে সব পুরুষ সমান নয়। কিছু থাকবেই এমন।
এ-ই যে পুরুষগুলো এরা শিশুকালে কী-পান করেছিল কী-চুষে বড়ে হয়েছে। মনে পড়ে এদের?
এদের স্তন দেখে প্রেম জাগে। হাহ্!
কেউ কেউ বলতেই পারেন। এই যে-এতো কথা বলতেছে সেও তো পুরুষ। হ্যাঁ। আমিও তো পুরুষ। পুরুষ-মানুষ! আমারও ভালো লাগে নারী। ভালো লাগে
তার স্তুতি গাইতে। আমারও জাগে কিন্তু! পেরেম!
তবে স্তন পাছা-‘র মাংস দেখে নয়।
বাংলা গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
খুব ভালো লেগেছে । অনেক নতুনত্ব অনুভব হয়েছে। ভিশন ভালো।