দীর্ঘ ২৯ বছর পর ২৯ বছর বয়সে আবারো প্রেমে পড়লাম!আরেকটা সত্যিকার প্রেমে পড়লাম! প্রথম যখন সত্যিকার প্রেমে পড়ি,তখন আর কতই বা বয়স! ওই ধরুন আট-নয়।দ্বিতীয় যখন সত্যিকার প্রেমে পড়ি তখন আমি ক্লাস টেনের ছাত্র।আর তারপর যা হয়েছে তা ছিল উঠ্কো আবেগ।ফুঁকোঝুঁকো।
-তাই! সত্য বলার জন্য ধন্যবাদ।
-আমি নক্ষত্র খুঁজতে খুঁজতে দু’টো কৃষ্ণবিবর আবিষ্কার করেছি।আমি তাঁর অভিকর্ষজ ত্বরণে আটকে গিয়েছি।মুক্তিবেগ আমার জানা নেই!
-আপনি বেশ গুছিয়ে কথা বলেন!তা কৃষ্ণবিবর দু’টি কই?আপনার আবিষ্কৃত!দেখা যায় কি তাদের?
-হ্যাঁ।আমি ত পদার্থবিদ নই।ভাবুকদের কৃষ্ণবিবর দৃশ্যমান।তবে তা কেবল ভাবুকরাই আবিষ্কার করে। তোমার ওই দু’টো চোখই আমার আবিষ্কৃত কৃষ্ণবিবর। আমার কৃষ্ণবিবর!(বলতে বড় ভালোই লাগছে!)
-হি হি হি!
-তেমার ওই চ্যাপ্টা ঠোঁটের হাসি আমি অনেক বছর ধরে খুঁজেছি।আজ সামনা সামনি দেখছি!তোমার নাকের সোজা ওষ্ঠ’র অবিচ্ছন্ন কোসাইন ফাংশন মোনালিসা কে-ও হার মানাবে।
-থাক!আপনার কাব্যের আধা ঘোলা জল আমাকে আর খাওয়াইয়েন না।বরং আপনারই সময় নষ্ট হবে তাতে।
-সময়কে নষ্ট করেই তো পার করতে হয়!অতীত সকল সময়ই তো আজ মৃত, নষ্ট!আমি চাই আমার আগামী প্রতিটা অদৃষ্ট-সময় তোমার চক্ষুবিবরের নিউক্লিয় বিস্ফোরণে পুড়েই ছাই হোক!নষ্ট হয়ে যাক!তবু তাকিয়ে থাকব ওই কৃষ্ণবিবরে।পৃথিবীতে আমি যেতে চাই নে।এই বিবরে আমি বারবার ফিউশনিত হব।
-বাদ দেন আপনার এই ফিশন-ফিউশন! চলুন বাদাম খাইতে খাইতে পার্কটা ঘুরি।
-বাদাম খাওয়াটা কমন লাগে।অন্য সবার মত। এক কাপ চা?
-ওকে।চলুন।
-তুমি তো দারুণ ভাবে চা খাইতে পার।কোন শব্দ ছাড়াই।বেঞ্চে পা দোলাইতে দোলাইতে।কী অপরূপ ভঙ্গিমা!
-হু! আপনি কেন শব্দ করে খান?
-শব্দ করে খেলে আমার নিজেকে তখন রাজা-বাদশাহ’র মত লাগে।তাই।
-বাহ্!
-তোমার গাল বেয়ে নেমে আসা ওই অভুক্ত চুলগুলো চা খাওয়ার দৃশ্যকে আরো মাখিয়ে তুলছে।
-আপনার কথা খারাপ না! তবে একটু বেশিই বলেন।
-বলেন না বল বকেন! আচ্ছা চল ওই দিকটাতে গিয়ে বসা যাক।
-হুম! চলেন।
-আকাশের দিকে তাকাও।দ্যাখো।কত শত তারারা তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
-হ্যাঁ।কিছু তারা খসে পড়ছে দূর-পাহাড়ের চূড়ায়।
-ওরা আসলে তোমার কথাগুলো গিলতে চাইছে মর্ত্যে নেমে!তবে তোমার নিষ্ঠুর ওষ্ঠাধরা পরিপাকে গ্যাঞ্জাম ঘটাতে পারে!
-হা হা হা!
-তুমি তোমার নামের বানানটা ভুল কেন লেখ?
-যাতে কেউ শব্দার্থ খুঁজে না পায়!
-কিন্তু তুমি চাও কেউ উৎসাহী হয়ে খুঁজুক!
-হুম!সবাই-ই তো নিজেকে লুকিয়ে রাখে।
-ঠিক।সে চায় কেউ তাকে খুঁজে বের করুক। হুমায়ুন আহমেদ যথার্থই সাজিয়েছেন বাস্তবতার ডালি।
-হুমায়ুন-ও পড়েন দেখছি!
-নাহ্।কথাসাহিত্যিকদের কারোর লেখাই আমার পড়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি এখনো।তবে ফেবু’র কৃপায় মহৎ ব্যক্তিদের কিছু কিছু বাণী চোখে পড়লে সেগুলো হাতছাড়া করি না।
-ও! ভালোই!
-হুম। অনেক কবিই মেয়েদের চোখের কাজলকে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে উপমিত করেছেন।আমার কাছে কিন্তু তোমাকে কাজল ছাড়াই বেশি ভাল লাগে।তোমার ভ্রমরকালো ভ্রুজোড়া এমনিতেই ভ্রমর-আকর্ষক। আর তোমার গোড়ালির নিচে নামিয়ে শাড়ি পরার অভ্যাসটা পৃথিবীর সকল সুন্দরের থেকেও সুন্দর।
-বুঝছি।কিন্তু শুনুন, আমি প্রেমে একদমই বিশ্বাসী না!
-অফিসপাড়ার কত শ্রমিক তোমার প্রেমের কারখানায় মজুরী খাটছে, তুমি জান?
-কেন?আপনি কি ইদানীং কবিতা লিখা বাদ দিয়ে এই হিসাব রেখে বেড়াচ্ছেন?
-না! তা নয়।কবিতা লেখাটা আমার একান্ত শখ মেটানো। তোমাকে খুঁজে পাওয়ার পর থেকে আমার কবিতারা তোমার শাড়ির সুতোয় আটকে গেছে।
-তাই বুঝি! তা ছাড়িয়ে নিচ্ছেন না কেন?
-কারণ তারা চায় তোমার আঁচলের ফাঁসে ফাঁস খেয়ে ছোট গল্প হতে!
-এমন অদ্ভুত চাওয়া থেকে বিরত থাকেন।রাত হচ্ছে।চলুন বাসায় ফেরা যাক।
-আমি তোমার পথের দুর্বা ঘাস হব।তোমার আলতা-পায়ে শিশিরের চুমু দেব।
-মশাই, আপনার প্রেম ওই কবিতার লাইনকেই বেশি উত্তেজিত করে।কোনো ভাল প্রকাশকের কাছে গিয়ে প্রকাশ করেন।তাতেই লাভবান হবেন।আমার দেরিতে ঘুম ভাঙে।ততক্ষণে রোদ শুষে নেবে শিশিরকণা।
-তোমার সকাল বেলার এলার্ম হব।তুমি একরাশ বিরক্তি নিয়ে একবার বলো “ধুর! ও’মশাই, সাতসকালে জ্বালায়েন নাতো!” আমি এক-হৃদয় আবেগ নিয়ে হাজার বছর অক্লান্ত তোমাকে প্রকাশ করে যাব।আমার কিতাবের প্রকাশক তো তুমিই।তুমি ছাপাতে না চাইলেও তোমার দরজায় ধন্না ধরে থাকব!
কয়েকদিন আর তাঁকে অফিসে দেখি না।খোঁজ নিয়ে জানলাম সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে এ শহর ছেড়ে চলে গেছে।কিছুদিন পর একটা চিঠি আসল।তাতে লেখা ছিল:
আমি আগামী মাসে লন্ডন যাচ্ছি। ওখানেই আমার বিয়ে ঠিক করেছে আমার পরিবার।এক বিদেশি ছেলের সাথে।বাই দ্যা ওয়ে, বাংলা ভাষায় আপনার কথাগুলো খুব মিস করব।মাঝে মাঝে, প্লিজ আমায় টেলিগ্রাম করবেন আপনার কবিতা।ওগুলোকে কারোর শাড়ির আঁচলে ফাঁসি দেবেন না।বাঁচিয়ে রাখুন।গুডবাই।
ইতি-
নবনীতা ।
লেখনি খুব সুন্দর।
আমার অনেক ভালো লেগেছে।