শীতের সকাল: তেঁতুলের টক আর লালশাকের স্মৃতি
কোয়ান্টাম মেকানিক্সটা খুলে বসে আছি টেবিলে। বসে থাকতে পারছি কই। সুড়সুড়ি লাগছে।
পাশের বাসা থেকে কাঁচা তেঁতুল আর লাল শাকের টকটক গন্ধ আসছে যে! নাকে। গন্ধও কি ফোটন আকারে আসে? আমি জানিনা। এসব হিসাব জটিল। আমার মত নলখাগড়ার মস্তিষ্কে ওসব ঢোকে না! অন্তত এখন ঢুকতে চাচ্ছে না।
আমার সেরেব্রাম মূহুর্তে মনে করিয়ে দিল:
বিকালে খেলা করে মাঠ থেকে বাড়ি ফিরেছি, মা বলল, “কয়ডা কাঁচা তেঁতুল পা’ড়ে নিয়ে আয়। সকালে লাল শাক দিয়ে টক রানবানে।”
আমি আমাদের পুকুরের পাড়ের তেতুল গাছ থেকে এক ছড়ি কাঁচা তেঁতুল কোটা দিয়ে পেড়ে রান্না ঘরে রেখে আসলাম। পরদিন সকালে মা কুয়াশার মধ্য দিয়ে উঠোনের ক্ষেত থেকে শিশিরসিক্ত লালশাকের গোড়া উপড়ে কলঘাটে পিঁড়িতে বসে বসে কুটতেছে। তারপর উঠোনে তোলা দো’উনুনে শুকনো নাড়া(খড় বা কুটো) দিয়ে রান্না করছে। একপাশে ভাতের হাড়ি অন্য পাশে তরকারির কড়াই।
আমি ঘুম থেকে উঠে হেঁটে হেঁটে দাঁত ব্রাশ করে বারান্দার পোটনের ওপর এসে বসে-বসে পউষের রোদ পোহাচ্ছি। মা বলল, “গাছের তে খেজুরের ভাড়ডা পা’ড়ে আন দিন! দেই কদডুক রস হয়িছে।”
আমাদের ঘরের পিছনে কোণার দিকে একটা খেজুর গাছ। এই একটাই কাটা হয়। যে রস হয় তাতে আমাদের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির জন্য যথেষ্ট। দানা করে খাওয়াও হয় তারউপর মা শুকনো বরইও মাখায়। গিয়ে দেখি গাছে মৌমাছিরা বনবন করছে ভাড় আর টানানো দড়ির চারিদিক ঘিরে। খেজুর গাছ থেকে কাঠ রস পেড়ে আনলাম।
মা একটা কাঁচের গেলাসে কাঁচা রস ছেঁকে দিল। সকালবেলায় খালি পেটে শীতল রস কী যে ভালো লাগে পাকস্থলীর!
একটু পর মা থালায় তেলাকুচার ডগা আর তেলাপিয়া মাছের ঝোল দিয়ে ভাত বেড়ে দিল।
আমার এলাকায় তেলাপিয়া মাছ আমাদের ”জাতীয় মাছ”। আমার তো পুকুরের বুড়ো বড় বড় তেলাপিয়া আর পিঁয়াজের শুকনো ঝোল খেতে হেব্বি লাগে!
এটার আরেকটা কারণ তেলাপিয়ায় কাঁটা কম। সহজে কম সময় নষ্ট করে খাওয়া যায়। আঙুর ফল টক ও বলতে পারেন, তেলাপিয়াকে জাতীয় মর্যাদা দেয়ায়।
তারপর মা বাটিতে করে দিয়ে গেল টুকটুকে বর্ণের লালশাকের টক।
আহ্! মিস্টি মিস্টি টকটক!
টকে সামান্য চিনির ছোঁয়া না থাকলে আমার জিভে তেমন স্বাদ আসে না। মা কয় টক খাবি টকের মত। কিন্তু মিষ্টি মিষ্টি টকই আমার পছন্দ।
মনে পড়ছে আরও কত কী!
সেই যে ২০১২ তে কলেজে পড়ার জন্য বাহির হলাম তারপর আর উইন্টার মোর্নিং চোখে চেখে দেখা হয়নি। সেই শিশির এখন আর দেখা হয় না। সকালে উঠে দুর্বার শিষে লেগে থাকা শিশিরদানা, কচুর পাতার ওপরে জড়ো হওয়া শিশিরফোঁটা তর্জনীতে তুলে ঠোঁটে মুখে মাখা হয় না কতদিন!